সংস্কৃতির বাজেট বাড়ানো হোক
মিজানুর রহমান: মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রক্ত ক্ষয়ি সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর আমাদের দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীন সার্বভোম দেশের প্রথম বাজেট ঘোষিত হয় ১৯৭২ সালের ৩০ জুন। ঐতিহাসিক এই বাজেট প্রনয়ন করেন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ আর স্বাধীন দেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসে বাজেট দাড়ালো ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। গানিতিক হিসেবে ৭৬৭ গুন বৃদ্ধি। দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য অতি প্রয়োজনীয় খাত হলো খাদ্য, বস্ত্র,বাসস্থান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি। জাতি গঠনের পথ নির্দেশনা তৈরী করতে হলে অবশ্যই সংস্কৃতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে।
সংস্কৃতি চর্চার উপর গুরুত্ব দিতে হবে তাতে করে এই খাতে সরকারের ব্যয় বাড়তে পারে, এই বৃদ্ধিকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। মানুষের সমস্ত জীবনাচারই হলো সংস্কৃতি সুতরাং মানুষ যতটা সুস্থ সুন্দর সাবলীল হবে সমাজও ততোটাই এগিয়ে যাবে। সুস্থ ধারার সংস্কৃতি সুন্দর আগামী নির্মাণ করবে। সত্যসাধক ন্যায়নিষ্ঠ্য মানুষ পারে অনাচার কুপমুন্ডুকতা আর কুসংস্কার মুক্ত মানবিক সমাজ গঠন করতে।

লোভ লালসায় পড়ে বিপদগামী হয়ে অন্যায় অনাচারে জড়িয়ে পড়াদের কে সুস্থ সংস্কৃতি আলোর পথ দেখাবে। হতাশা গ্রস্থ নেশাসক্ত প্রজন্মকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনবে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি হবে আলোর দিশারি। সংস্কৃতি শুদ্ধ জীবনাচার শেখায়। একজন সংস্কৃতিবান মানুষ কখনো অন্যায় অসদাচরণে জড়াবে না। সংস্কৃতিজন নিজেকে অনুসরণীয় করে চারপাশকে কলুষতা মুক্ত করেন। নতুন প্রজন্ম তৈরীতে রাষ্ট্র এবং সরকার কে বিনিয়োগ করতে হবে।
দেশের জাতীয় প্রচার মাধ্যমগুলো নানা কারণে মূল জায়গা থেকে সরে যাওয়ায় তাদের ভুমিকা আশা ব্যন্জক নয় বরং প্রশ্নবোধক। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশে সংস্কৃতি চর্চার অবকাঠামো নেই। বহু সংখ্যক সৃজনশীল মানুষ এর সাথে যুক্ত থাকলে সারা দেশে সুন্দরের ঢেউ তোলা যেতো।
বাস্তবতা হলো ঘরের খেয়ে বনের মুষ তাড়ানো লোকের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এখনো যারা একাজে আছে সরকারের উচিৎ তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে সংস্কৃতি কে বেগবান করা। এবারের বাজেটে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বরাদ্দ দেখে জাতীয় ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠন সমুহ চরম হতাশা প্রকাশ করে জাতীয় বাজেটের ১% সংস্কৃতির জন্য বরাদ্দের জোর দাবি জানায়।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এর নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক সম্মেলন করে ৯ টি প্রস্তাবনাসহ বাজেট বৃদ্ধির কথা বলে। মহান জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন চলছে,সরকার চাইলে এর পরিবর্তন করে বাজেট বাড়িয়ে সংস্কৃতি চর্চাকে আরও বেগবান করতে পারে। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে বর্তমানের অস্থিরতা কাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ সম্ভব।
-মিজানুর রহমান , সভাপতি বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদ।