বাংলাদেশ একটি ট্যালেন্টস হন্তা দেশ
——–অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
বাংলাদেশ একটি ট্যালেন্টস হন্তা দেশ। এর শ্রেষ্ট উদাহরণ হলো আমাদের জামাল নজরুল ইসলাম। এত বড় বিজ্ঞানী সাম্প্রতিক ইতিহাসে আর দ্বিতীয় কেউ নাই। তিনি ১৯৮৩ সালে স্বেচ্ছায় বাংলাদেশে চলে আসেন। তার ফিরে আসাকে আমি দেখি স্বেচ্ছায় নিজের ট্যালেন্টসকে বলি দেওয়া। দেশে ফিরে তিনি আর কোন বড় কাজ করতে পারেননি। আমাদের সরকারেরা বুঝতেই পারেনি কত বড় একটা সম্পদ স্বেচ্ছায় চলে এসে চট্টগ্রামে গিয়ে পরে রইল। অথচ তদানীন্তন সরকার চাইলে তাকে ঘিরে একটি বড় গবেষণা ইনস্টিটিউট খুলতে পারতো আর তাকে বলতে পারতো টাকা কোন সমস্যা না আপনি নিজের মত করে এটিকে ওয়ার্ল্ড ক্লাস গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলুন। পৃথিবীর তামাম বড় বড় গবেষক জামাল নজরুল ইসলামকে চিনতেন। স্টিফেন হকিং ছিলেন তার বিশেষ বন্ধু এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় রুমমেট। তিনি পারতেন দেশ বিদেশের স্বনামধন্য গবেষকদের স্থায়ীভাবে না হলেও ৩ থেকে ৬ মাসের জন্য ভিজিটিং স্কলার হিসাবে আনতে। চীন স্পেশাল ট্যালেন্টস হান্ট প্রোগ্রাম চালু করে জামাল নজরুল ইসলামদের মত গবেষকদের চীনে নেওয়ার জন্য। আর উনি স্বেচ্ছায় এসেছিলেন।
শুধুই কি জামাল নজরুল ইসলাম? অধ্যাপক জাফর ইকবালকে কি আমরা ব্যবহার করতে পেরেছি? তিনিও দেশে ফিরে তেমন কোন গবেষণা করতে পারেননি। কারণ সেই পরিবেশই নেই। তাকে কি ন্যূনতম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বানানো যেত না? শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হয়ে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেই ভূমিকা রেখে এসেছেন তা এক কথায় অসাধারণ। তাকে যদি বাংলাদেশের কোন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি করা হতো আমি নিশ্চিত সেটিকে তিনি অনন্য উচ্চতায় নিতে পারতেন। ড. মাহবুব মজুমদার আরেক সুপার ট্যালেন্টেড মানুষ স্বেচ্ছায় দেশে বাংলাদেশে চলে এসেছে। সে গণিত অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে অনেক কান্ট্রিবিউট করেছে। কিন্তু তেমন গবেষণা করতে পারেনি। কারণ সেই পরিবেশ দিতে পারিনি। আরেক সুপার ট্যালেন্টেড হলো ড. আরশাদ মোমেন। সেও স্বেচ্ছায় একদিন বাংলাদেশে চলে এসেছে। তাকে কি আমরা ব্যবহার করতে পেরেছি?
বর্তমান বিশ্বের সেরা বাংলাদেশী গবেষক হলেন প্রিন্সটনের অধ্যাপক জাহিদ হাসান। আশা করি তিনি হবেন নোবেল বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশী পদার্থবিদ। এই জাহিদ হাসান যদি আজ স্বেচ্ছায় বা কোন কারণে বাংলাদেশে ফিরে আসে কল্পনা করতে পারেন ট্যালেন্টস হত্যা কোন পর্যায়ের হবে? তার মত ব্যক্তিও বর্তমান পরিবেশের বাংলাদেশ হলে কিছু করতে পারবে না। অথচ আমরা যদি টাটা ইনস্টিটিউট ফর ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ বা ভারতের IISc মত ইনস্টিটিউট খুলে বাংলাদেশী বড় বড় গবেষকদের বছরে অন্তত ৬ থেকে ১২ মাস এসে কাজ করার সুযোগ দেই, দেশি বিদেশী প্রচুর পোস্ট-ডক নিয়োগ দিয়ে ওয়ার্ল্ড ক্লাস পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করি তাহলেই দেশে গবেষণার পরিবেশ তৈরী হবে। “প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ” বা “বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ” দিয়ে আমরা বাংলাদেশের ট্যাক্সের টাকায় অন্য দেশে গবেষনার জন্য খরচ করছি। কি অবিবেচক আমরা? এই টাকা দেশে গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টিতে যথাযোগ্য পরিকল্পনার মাধ্যমে খরচ করা যেত।
বিদেশ থেকে আমাদের স্কলারদের দেশে ফিরিয়ে আনার আগে এখানে ন্যুনতম একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এই হোম ওয়ার্কটা আমাদের যত শীঘ্র সম্ভব করা উচিত। যারা আসবে তাদের জন্য নিয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে, গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রচুর বরাদ্দ লাগবে। সবাইকে সমানভাবে মাপলে বিশেষ মানুষ তৈরী হবে না। যে যোগ্য তাকে বেশি সুযোগ দিতে হবে। সকল অধ্যাপকের বেতন এক, সুযোগ সুবিধা এক, সম্মান এক তাহলে হবে না। ব্যতিক্রমী মানুষ তৈরী করতে হলে ব্যতিক্রমীদের জন্য ব্যতিক্রমী নিয়ম করতে হবে। সূত্র: ফেসবুক থেকে নেওয়া