নির্বাচন কমিশন থেকে এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে রাজনৈতিক সরকারের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়ে সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এনআইডির দায়িত্ব না নিয়ে তারা নিজেরাই নতুন করে অবকাঠামো তৈরি করতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের উদাহরণ দিয়ে লাভ নেই। অন্যান্য দেশ এটা করেছে বলে আমাদেরও যে করতে হবে বিষয়টি এরকম হওয়া উচিত না। কারণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে হবে। ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন করতে হলে এনআইডির দায়িত্ব কমিশনের হাতে থাকা আবশ্যক।
রোববার ‘সরকার কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার উদ্যোগ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল নাগরিক সংলাপ অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার। সংলাপটি আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এতে সভাপতিত্ব করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ক্ষেত্রে ইসির আগে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা দায়ী থাকার বিষয়টি বিভিন্ন তদন্তে উঠে এসেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যরা রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধন দিতে সহায়তা করেছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকারের কাছে এনআইডির দায়িত্ব গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এজন্য বলবো, নির্বাচন কমিশনের নিজ হাতে গড়ে তোলা এনআইডির দায়িত্ব না নিয়ে আলাদা অবকাঠামো তৈরি করতে পারে।
সুজন জানায়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। ভোটার তালিকা প্রণয়ন নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। পাশাপাশি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ অনুযায়ী জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের কাজটিও নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। যেহেতু জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোটদান জাতীয় পরিচয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রমটি নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা যৌক্তিক ও অত্যাবশ্যক।
সুজন আরও জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সুজন মনে করে, কোনভাবেই জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হওয়া উচিত নয়। সরকার কি উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন বিষয়টি নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশেই প্রতিবাদ করছে।
সংলাপে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটি এম শামসুলহুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. হামিদা হোসেন, বিচারপতি এম এ মতিন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রমুখ।