শাহজালালে কারফিউ শিথিলে বিমান যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি, নিরাপত্তা বলয় জোরদার

শাহজালালে কারফিউ শিথিলে বিমান যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি, নিরাপত্তা বলয় জোরদার

এস, এম, মনির হোসেন জীবন ।। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে আন্দোলনকারীদের ডাকে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাকালে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ও শুক্রবার (১৯ জুলাই) গত দুই দিন ঢাকার বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ব্যাপক হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এর ফলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে কার্যত সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়।

এসময় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য ঢাকাসহ দেশজুড়ে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।

এসময় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা যাওয়ার পথে বিদেশগামী যাত্রী এবং বিদেশ ফেরত যাত্রীরা চরম ভোগান্তি ও নানা ভাবে হয়রানীর শিকারে হন। কারফিউ শিথিলের ফলে তাদের (যাত্রীদের) মধ্যে অনেকটাই স্বস্তি এবং আনন্দ ফিরে এসেছে।

ভয় ও আতংক কেটে গেছে। গতকাল বুধবার সকাল ১১ টা থেকে আ বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত সকল সরকারি ও বেসরকারি অফিস আদালত খোলা ছিল এবং কাজ কর্ম স্বাভাবিক ছিল।

শাহজালাল বিমানবন্দর সহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এঘটনার পর ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বলয় ব্যবস্হা আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে।

বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি – জামায়াত শিবিরের ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজের মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরে কেউ কেউ স্বজনকে বিদায় জানাতে ও নিতে এসে আটকা পড়ে কয়েকরাত অপেক্ষা করছেন বিমানবন্দর এলাকাতেই। এর মাঝে অনেকেই বিদেশগামী যাত্রীদের নামিয়ে দিতে আসা বিভিন্ন প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসে করে বাড়ি ফিরতে চাইলেও গুণতে হচ্ছে প্রায় পাঁচগুণ বেশি ভাড়া।

বিমানবন্দর ও বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত তিনটি এয়ারলাইনসের আন্তর্জাতিক রুটে ১৭টি ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েন তারা। বিশেষ করে ১৯ ও ২০ জুলাই সৌদিয়া এয়ার লাইনসের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়।

এতে চারটি ফ্লাইটে যাত্রী ছিলেন ৪ হাজার ২০০। এ সময় তাদের অনেকেই বিমানবন্দরে অপেক্ষা করেন। এছাড়া দিনে ও রাতে আরো বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ নামতে দেখা গেছে।

তবে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) থেকে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে বাস চলাচলের খবরে অনেকের মাঝেই দেখা গেছে স্বস্তি। একইসঙ্গে বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে সারাদেশে কারফিউ শিথিলের সময় বাড়িয়ে বাস চলাচলের ঘোষণা স্বস্তির মাত্রা বাড়ায় বিমানবন্দরে আটকে পড়া যাত্রীদের।

গতকাল বুধবার (২৪ জুলাই) ও আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বিমানবন্দরে গিয়ে বিপুল সংখ্যক যাত্রী দেখা গেছে। তবে বিমানবন্দর রেলওয়ে সংলগ্ন বিভিন্ন বাস কাউন্টার এলাকায় যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসময় বিমানবন্দর আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে নিরাপত্তার চাদরে ডেকে রাখেন।

বিএনপি – জামায়াত শিবিরের সহিংসতায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা প্রবাসি যাত্রীদের নিরাপদ স্থান ছিল।

তারা এখানে বসে স্বজনদের পেতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছেন। বিমানবন্দর সংলগ্ন আশকোনা হজ্ব ক্যাম্প ও উত্তরা এলাকার বিভিন্ন হোটেলে যাত্রীরা থাকার চেষ্টা করলে সেখানেও গুণতে হয় অতিরিক্ত তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া। ২২ ও ২৩ জুলাইও বিমানবন্দরে দেখা যায় যাত্রীদের অপেক্ষার প্রহর গুণতে।

এ সময়ে মালয়েশিয়া গামী একটা ফ্লাইটসহ বিভিন্ন দেশের একাধিক বিমান বাতিল করা হয়েছে। আর তাই অপেক্ষমাণ যাত্রী সংখ্যা বাড়তেই থাকে। এসময় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করতে দেখা গেছে।

এসব বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, কিছু সমস্যা হয়েছিল তবে সেগুলো আস্তে আস্তে কমে আসছে।

এখন অনেকেই নির্ধারিত ফ্লাইট সময়সূচীর আগেই বিমানবন্দরে পৌঁছাচ্ছেন। বিমানবন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। কাজ করতে কোন ধরনের অসুবিধা হচেছ না।

তিনি গণমাধ্যমকে আরও জানান, ফ্লাইট শিডিউলে বিলম্ব হচ্ছে না তাই আশা করছি সবাই নির্ধারিত সময়েই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। আমরা সবসময় তাদের পাশে আছি। আমাদের পক্ষ (সরকার) পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

কুমিল্লার বাসিন্দা ও মালেশিয়াগামি যাত্রী মোমেনা আক্তারের পিতা মনির হোসেন আজ এই প্রতিবেদককে জানান, আমার মেয়ের জামাই মালেশিয়া থাকেন। আমার মেয়ে মোমেনা আক্তার ও নাতনি সূতরাত গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০ টা ৫০ মিনিটের সময় ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স করে মালেশিয়া যায়।

বর্ডিং পাস অনলাইন না করার কারণে তাকে পর দিন বুধবার রাত ১১ টার দিকে দেশে মেয়েসহ ফিরে আসতে হয়েছে। তাদের দুই জনের আপডাইন বিমান টিকেট করা ছিল। এতে আমি অনেক গুলো টাকা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছি।

আজ দুপুর সাড়ে ৩ টায় রাজধানী পল্টন শ্রাবণ ইন্টারন্যাশনাল ট্রাবেল এজেন্সির মালিক সাদিয়া আফরিন এই প্রতিবেদককে জানান, ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত ২৬ জুলাই, ২০২৪ বাংলাদেশ থেকে গ্রুপ টিকেটে ১০ জন যাত্রী ওয়ার্ক ভিসায় সৌদি আরবে যাবার কথা ছিল। প্রতিটি টিকিটের মূল্য ছিল ৬০ হাজার টাকা করে। এর ফলে ট্রাবেল এজেন্সির মালিকরা সময় মত লোক (যাত্রী) পাঠাতে না পেরে বিপুল পরিমান টাকা লোকসান গুনতে হচেছ। এতে আমি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় বিমানবন্দর আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) পুলিশের এএসপি (মিডিয়া) জিয়াউর রহমান পলাশ এই প্রতিবেদককে ব জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে বিএনপি – জামায়াত শিবিরের আন্দোলন ভাংচুরের সময় বিমানবন্দরের গোলচক্কর এলাকাসহ পুরো এলাকা জুড়ে ৫ থেকে ১০ গুণ পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন ছিল। গত ৬ দিন ২৪ ঘন্টা এলার্ট অবস্হায় আছি। বিশৃঙ্খলার সাথে যারা জড়িত তাদের কাউকেই আমরা ভেরতে ঢুকতে দেইনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বলয় ব্যবস্হা আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, আগ্নেয়াস্ত্র ও সাদা পোষাকে দায়িত্ব পালন করছেন। সকল কার্যক্রম আগের মত অব্যাহত আছে। সকল ফ্লাইট স্বাভাবিক ভাবে উঠানামা করছে।

স/এষ্