নাশকতা ও গুজব মোকাবিলায় মাঠে থাকবে ১৪ দল

নাশকতা ও গুজব মোকাবিলায় মাঠে থাকবে ১৪ দল

বিশেষ প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট নাশকতা ও গুজব মোকাবিলায় মাঠে থাকবে। জোটগতসহ এককভাবেও কর্মসূচি দেবে ১৪ দল। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির বিরুদ্ধে ১৪ দল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

গত শুক্রবার রাতে গণভবনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বৈঠকে কোটা সংস্কারের নামে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে আলোচনার এক পর্যায়ে জোট নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এই ব্যবস্থা র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি দিয়ে হবে না। এই মুহুর্তে সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই। এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বেসামরিক বাহিনীকে সেনাবাহিনী সহায়তা করার বিষয়ে সম্মতি দেন। পরে পরিপত্র জারি করে সরকার।

বৈঠক সূত্রে জানায়, জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনারা কোনো পরামর্শ থাকলে দিতে পারেন। এরপর কথা বলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও বাসদ আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান। তারা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় সেনাবাহিনী নামানোর বিকল্প নেই। এতে রাজি হন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ থাকবে। যেহেতু আজ রোববার কোটা সংস্কারের ইস্যুর রায় দেবে আদালত। সেক্ষেত্রে আজ সকাল ১০টা থেকে রায় না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ থাকবে। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে যতদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে না আসবে ততদিন পর্যন্ত কারফিউ বলবত থাকবে। শুধু বলবত থাকবে তা নয়, কঠোরভাবে বলবত থাকবে। যেখানে বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্য করবে সেখানেই গুলি করতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলীয় জোট নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের পরামর্শ মেনে নিলাম। কিন্তু আপনাদেরও করণীয় আছে। পরিস্থিতি একটু নিয়ন্ত্রণে আসলে আপনার বিএনপি-জামায়াতের নাশকতাসহ বিভিন্ন ধরণের গুজবের প্রতিবাদে একের পর এক কর্মসূচি দেবেন। এরমধ্যে সমাবেশ, আলোচনা ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে। জনগণের মধ্যে একটি ভুল ম্যাসেস বিএনপি-জামায়াত প্রচার করেছে। এর জবাব দিতে হবে। তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। শুধু ১৪ দলীয় জোটের ব্যানারেই নয়। এককভাবেও আপনার কর্মসূচি নেন। তারা যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। বিএনপি-জামায়াত সরকারি সম্পদসহ জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। তাদের আমরা কোনোভাবেই ছাড় দিতে পারি না। ছাত্ররা কোটা সংস্কারের আন্দোলন করলেও তারা সরকারি সম্পদে কোনো হামলা করছে কি না জানি না। তবে এর প্রত্যেকটির বিচার হবে। তবে আমার কাছে যেটি মনে হয়েছে, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জড়িত। ছাত্রদের বিষয়টি আমি নমনীয়ভাবে দেখবো। কারণ তারা ছাত্র। তারা যা করেছে, এতো কিছু ভেবে করেনি। তবে বিএনপি-জামায়াত যা করেছে, তারা সরকার পতনের জন্য করেছে। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হবে। হত্যা মামলা হবে। তাদের যে কোনো মূল্যে বিচারের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসময় ১৪ জোট নেতারা পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করলে, শেখ হাসিনা বলেন, পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হোক। আপনারা যে ফরমূলা দেবেন। আমি সেই ফরমূলা মেনে নেবো। এসময় জোট নেতারা বলেন, আপনি রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুকে আপনার উপদেষ্টা করে নিতে পারেন। আর আপনি যে মন্ত্রীসভা গঠন করেছেন, তার চেয়েও জোটে অনেক ক্যাপাবল নেতা রয়েছেন। তাদেরকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ কাজ করার সুযোগ দিতে পারেন। তারা ভালো কাজ করতে পারবেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসুক, আমি দেখবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, গত শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে আমরা বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি প্রতিটি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমরা বলেছি, ছাত্রদের কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নিয়ে নিস্পত্তি করুন। বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা দমনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করুণ। পরে তিনি আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। তিনি বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা দমনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছেন। তবে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৪ দলীয় জোট আলোচনা করে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার প্রতিবাদে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা দমনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেন। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও ১৪ দলীয় জোটও বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার প্রতিবাদে নানা ধরণের কর্মসূচি পালন করবে।

বাসদ আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান বলেন, জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তিনি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত সারাদেশব্যাপি নাশকতা ও তান্ডব চালিয়েছে। তারা বিভিন্ন ধরণের গুজব রটিয়েছে। এরই প্রতিবাদে বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি হলে ১৪ দলীয় জোট মাঠে থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেবে। মুক্তিযুদ্ধে শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের যে কোনো নাশকতার বিরুদ্ধে আমরা মাঠে থাকবো।

এস/এ