নার্সারি পেশাই বদলে গেছে পাইকগাছার গদাইপুর গ্রামের মানুষের ভাগ্য 

নার্সারি পেশাই বদলে গেছে পাইকগাছার গদাইপুর গ্রামের মানুষের ভাগ্য

ইমদাদুল হক, পাইকগাছা (খুলনা)।। পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর নার্সারি গ্রাম নামে খ্য্যাত। এ গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ি যেন একটি নার্সারি। কোথাও অনাবাদি নেই এক চিলতে জমি। নার্সারি পেশাই গদাইরের মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।

গ্রামটিতে নীরব অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটে গেছে। নার্সারি ব্যবসা করে এখানকার অনেক মানুষ সফল হয়েছে। শূন্য থেকে কোটিপতিও হয়েছে। ইজারা নিয়ে নার্সারি গড়ে তুলে পরবর্তী সময়ে জমি ও বাড়ির মালিক হয়েছে। তাদের দেখাদেখি গ্রামের ক্ষেতের পর ক্ষেত গড়ে উঠেছে নার্সারি।

উপজেলার গদাইপুর গ্রামের মেইন সড়কের দুই পাশে নার্সারিতে নানা প্রজাতির গাছের চারার দৃশ্য নজর কাড়ে। রাস্তার পাশে যতদূর দৃষ্টি যায় ফুল, ফল, মসলা ও বনজের চারা দেখা যায়।

যেগুলোর গোড়ার মাটি পলি প্যাকেটে আবদ্ধ। চলতি পথে নার্সারিগুলোয় কর্মব্যস্ততার দৃশ্য চোখে পড়ে। কেউ নিড়ানি দিয়ে আগাছা বাছা ও ঝাঁজরি দিয়ে চারায় পানি দিচ্ছেন। আবার কেউ ভ্যান, নছিমন, ট্রাক ও পিকআপে চারা তুলে দিচ্ছেন।

দেশী প্রজাতির পাশাপাশি বিদেশী ফলের চারারও উৎপাদন হয় পুরে। এখানে স্ট্রবেরি, রাম্বুটান, ড্রাগন, থাই পেয়ারাসহ ৩০-৪০ প্রজাতির বিদেশী ফলের চারা তৈরি হয়। এছাড়া দেশী প্রজাতির সকল ফলের চারা নার্সারিগুলোয় পাওয়া যায়।

এসব ফলের প্যাকেট চারা বছরজুড়ে পাওয়া যায়। প্যাকেটে রোপণ করা চারার পাশাপাশি টবে লাগানো ফুল-ফলের চারাও এখানে বিক্রি হয়। চুই, লবঙ্গ, তেজপাতা, দারুচিনি, গোলমরিচ, এলাচসহ বেশ কয়েক প্রজাতির মসলার চারা উৎপাদন ও বিক্রি হয়।

গদাইপুরে ঢুকলে চোখে পড়ে ক্ষেতের পর ক্ষেত নার্সারি। বাড়ির সামনে-পেছনে ও আশপাশে নার্সারি গড়ে তুলেছেন সবাই। সব নার্সারির সানের সাইনবোর্ড লাগাানো।

নানা রকমের ফুল, ফল ও মসলার চারা বাড়িগুলোর সামনে। বাড়ির ভেতরে গড়ে তোলা নার্সারিতে চারা কেনাবেচার দৃশ্যও নজর কাড়ে। কেবল বর্ষা মৌসুমেই এ গ্রামের কয়েকশ নার্সারিতে ৬কোটি টাকার চারা বিক্রি হয়। আর সারা বছরের বিক্রি ১২কোটির বেশি।

উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ছোট-বড় প্রায় ৫ শতাধিত নার্সারী গড়ে উঠেছে। যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যা রয়েছে গদাইপুর গ্রামে। মৌসুম শুরুতে চারা তৈরীর জন্য নার্সারী মালিক ও কর্মচারীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠে। বর্ষা শুরু হলে গুটি কলম তৈরী করা হবে।

উপজেলার বিভিন্ন নার্সারীতে চলতি মৌসুমে কুলের প্রায় ১ কোটি কলম তৈরী হচ্ছে। গদাইপুর গ্রামের নার্সারী মালিক হাবিবুর রহমান জানান, তিনি নার্সারীতে ৭০ লাখ চারা উৎপাদনে ব্যস্ত রয়েছে।

গদাইপুর গ্রামের অবস্থিত সততা নার্সারীর মালিক অঞ্জনা রানী পাল জানান তার নার্সারীতে বিভিন্ন জাতের কুলের প্রায় ৮ লাখ কলম তৈরী করছেন। তবে কলম তৈরীর সময় পার হয়ে গেলে এ মৌসুমের আর কলম তৈরী করা যাবে না। সে কারনে কলম তৈরীতে অধিক পয়সা খরচ হচ্ছে। তাছাড়া নার্সারীতে বিভিন্ন জাতের হাইব্রীড জাত কাটিমন আম ২০ হাজার, মাল্টা ২ লাখ, পিয়ারা ৫০ হাজার, সফেদা ৫০ হাজার, জামরুল ৩০ হাজার।

এ সব কলমের মধ্যে থাই পেয়ারা, জামরুল, মালাটা, কদবেল, কমলালেবু, আম সহ বিভিন্ন জাতের কলম রয়েছে।নার্সারি ব্যবসায়ীরা জানান, গদা পুরে নার্সারি ব্যবসার যাত্রা হয় রিক্তা নার্সারি হাত ধরে। সওকত মলঙ্গী স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে তিনি নার্সারির ব্যবসা শুরু করেন। তার ছেলেরা এখন সেই নার্সারি ব্যবসার হাল ধরেছেন। তাদের নার্সারি ব্যবসা দেখে সামছুর রহমানসহ অনেকে নার্সারির ক্ষেত গড়ে তোলেন।

পাইকগাছা উপজেলা নার্সারী মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার পাল জানান, কলম তৈরীর শ্রমিক ঠিকমত না পাওয়ায় উচ্চ মূল্যে শ্রমিক নিয়ে কলম তৈরী করতে হচ্ছে। কারণ সময় চলে গেলে এ মৌসুমে আর কলম তৈরী করা যাবে না।

গদাইপুর এলাকার তৈরী কলম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে।

তবে ঠিকমত বাজার দর না পাওয়ায় নার্সারী মালিকরা আশানারুপ ব্যবসা করতে পারছে না। নার্সারী ব্যবসায়ীরা জানান, চারা উৎপাদনে সরকারি ভাবে লোনের ব্যবস্থা করলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নার্সারী শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ জানান, পাইকগাছার নার্সারী শিল্প খুলনা জেলা শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। নার্সারী ব্যবসায়ীরা চারা বিক্রি করার আশানারুপ বাজার ধরতে না পারায় তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নার্সারী ব্যবসা করে মালিক, ব্যবসায়ীরা সাবলম্বী হচ্ছে।

তেমনি নার্সারীতে নিয়জিত হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। নার্সারীতে উৎপাদিত চারা সবুজ বননায়নে উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রেখে পরিবেশের ভারশাম্য রক্ষা করছে। তেমনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাখছে বড় অবদান।

স/এষ্