শ্বাসরুদ্ধ ম্যাচে ভারতের দ্বিতীয় শিরোপা
রাহুল রাজ ।। দক্ষিণ আফ্রিকাকে কেন চোর্কার বলা হয় তার প্রমাণ আবার পেলো দর্শকেরা। তীরে এসে তরী ডোবানোর দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি আবার দেখলো বিশ্ব।
ক্রিকেট ভক্তদের সূর্যকুমার যাদবের ডেবিড মিলারের ক্যাচটি ধরার মুহুর্ত সারাজীবন চোখের আটকে থাকবে। ১৩ বছর পর আবার ভারতের হাতে উঠল টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের শিরোপা। দক্ষিণ আফ্রিকা হারলো ৬ রানে। শিরোপা জিতেই ম্যাচ সেরা কোহলি টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানালেন।
বললে শিরোপা জিতে মাথা উঁচু করে বিদায় নিতে পারছি। ম্যাচের ফলাফল সব সময় পেন্ডুলামের মত দুলছিলো। তবে বেশির ভাগ সময় দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে জয়ের সম্ভবনার পাল্লা ভারি ছিলো। শেষ পর্যন্ত ভারতের অভিজ্ঞতার কাছে হারতেই হলো চোর্কার খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
সেই সঙ্গে চোখের জলে শিরোপা বরণ করে নিলো ম্যান ইন ব্লু’রা। মহেন্দ্র সিং ধোনি মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নুয়ান কুলাসেকেরার বলে ছয় হাঁকাচ্ছেন, এটাই গত ১৩ বছর ধরে ভারতের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ছিল।
একটা বিশ্বকাপের জন্য এরপর থেকে হন্যে হয়ে ঘুরেছে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু আসেনি। সাতমাস আগেই নিজেদের মাটিতে হেরেছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল। সেই আক্ষেপ মিটল নিজ থেকে বহুদূরের মাটিতে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপ
বার্বাডোজের কড়া রোদের নিচে আরেকবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত। ১৭ বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরের শিরোপা ঘরে তুলেছিল ম্যান ইন ব্লুরা। সেটা দিয়েই শিরোপার পথে নেমেছিল ধোনির ভারত। লম্বা অপেক্ষা শেষে আবারও সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়েই শিরোপাখরা ঘুচালো দলটা।
বার্বাডোজে উৎসবের মঞ্চ আগেই সাজিয়ে রেখেছিল ভারত। ১৭৬ রানের শক্ত সংগ্রহ তারা দাঁড় করায় ফাইনালের মঞ্চে। বল হাতে শুরুটাও ছিল চ্যাম্পিয়নদের মতোই। মাঝে কুইন্টন ডি কক আর হেনরিখ ক্লাসেন দাঁড়ালেন দেয়াল হয়ে।
এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার জয়টাও ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার নামের পাশে যে লেগে আছে চোকার্স তকমা। ২৪ বলে ২৬ রানের সমীকরণটাই আর মেলানো হয়নি তাদের। আর্শদ্বীপ সিং আর জাসপ্রিত বুমরাহ একের পর এক ডট ডেলিভারিতে চাপ বাড়িয়েছেন। সঙ্গী ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। স্নায়ুচাপের লড়াইয়ে জয় হলো ভারতেরই।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। হার্দিক পান্ডিয়ার ওই ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি লাইনে মিলারকে দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফেরালেন সুর্যকুমার যাদব। দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ শেষ হয়ে গেল সেখানেই। শেষ ওভারে এলো ৮ রান।
ব্যর্থ হলো হেনরিখ ক্লাসেনের ২৭ বলে ৫৪ রানের দুর্দান্ত সেই ইনিংস। ৭ রানের জয়ে বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন ভারত। এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারত ভক্তদের নিশ্বাস আটকে যাবার উপক্রম হয়েছিলো। দলীয় ৩৪ রানেই সাজ ঘরে ফিরে গিয়েছিলো প্রথম সারির তিন ব্যাটসম্যান।
পুরো টুর্ণামেন্টে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোহিত শর্মা এদিন শুরুতেই ব্যর্থ হন। এর পর খুব দ্রুতই পান্ত এবং সূর্য ফিরে গেলে সম্পূর্ণ চাপে পড়ে যায় ভারত সেখান থেকে ভিরাট কোহলী ও অক্ষর পাটেল ৭২ রানের জুটি গড়ে ভারতেকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে বুকে আটকে থাকা নিশ্বাস সস্তি¡র সঙ্গে বের করে আনেন। কোহলীর ৭৬ এবং অক্ষর পাটেলের ৪৭ রানে রানে ভর করে স্কোর বোর্ডে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৭৬ রান।
ফাইনালের ভারতের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। মার্কো জানসেনের প্রথম ওভারে বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে এলো ৩ চার। এরপর কেশব মহারাজের ওভারে শুরুতেই দুই চার তুলে নেন রোহিত শর্মা। ভারতের উড়ন্ত শুরুর পর বড় একটা স্কোরের প্রত্যাশা করেছিল সবাই।
কিন্তু এরপরেই মহারাজের ম্যাজিকাল মোমেন্ট। কেশব মহারাজের তিন বলের ব্যবধানে দুই উইকেট আর কাগিসো রাবাদার বলে সূর্যকুমারের ফেরা, ভারতকে পিছিয়ে দেয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল। অক্ষর প্যাটেল আর বিরাট কোহলি এরপর সময় নিলেন খানিক।
ইনিংস মেরামত করে ১০ ওভারে দলের রান নিলেন ৭৫ পর্যন্ত। ইনিংসের মাঝপথে এমন স্কোরে সন্তুষ্ট হতেই পারে ভারত। পাওয়ারপ্লেতে রানের লাগাম টানার কাজটা বেশ ভালোভাবেই করেছেন কেশব মহারাজ। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে প্রোটিয়া এই বোলার পাওয়ারপ্লেতে গড়ে খরচ করেছেন মোটে ৭.২৩ রান। এসময় তিনি তুলে নিয়েছেন ৬ উইকেট।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও দ্বিতীয় ওভারে তাকে আনলেন এইডেন মার্করাম। ইনফর্ম রোহিত শর্মা আউট হলেন পরপর দুই চার মেরে। পরের সুইপ করেছিলেন, কিন্তু সরাসরি ক্যাচ গেছে স্কয়ার লেগে থাকা ক্লাসেনের হাতে। একটু গতি কমিয়ে বল করেছিলেন মহারাজ। সেটিই কাজে লেগেছে। আর ওভারের শেষ বলে আউট ঋষভ পন্তও! তিনিও সুইপ করেছিলেন, ক্যাচ ওঠে ওপরে। যেটি নেন কুইন্টন ডি কক।
কাগিসো রাবাদা বরাবরই ভারতের ব্যাটারদের বিপক্ষে সফল। তাকেই আক্রমণে আনা হলো এরপর। টানা উইকেট হারিয়ে খানিক চাপে পড়েছে ভারত। বিরাট কোহলি আর সূর্যকুমার যাদব দুজনকেই দেখা গেল কিছুটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে। কাগিসো রাবাদা এর আগে টি-টোয়েন্টিতে সূর্যকে ফিরিয়েছেন ৩ বার।
তারই বলে আটকালেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার। নিজের পছন্দের ডিপ ফাইন লেগে উড়িয়ে খেলতে চেয়েছেন। কিন্তু আরও একবার হেনরিখ ক্লাসেনের বিশ্বস্ত হাতে জমা পড়ল ক্যাচ। ভারত আরও একবার বিপদের মুহূর্তে দলের হাল নিতে পাঠাল অক্ষর প্যাটেলকে। নিরাশ করেননি তিনি।
বিরাট কোহলির সঙ্গে ঠিকই দলের রানের চাকা ঘুরিয়েছেন। সুযোগ পেলেই বল করেছেন সীমানাছাড়া। পাওয়ারপ্লেতে ৪৫ রান ওঠানোর পর ভারত রান কিছুটা হলেও তুলেছে। অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে ভারতের বাজি কিছুটা হলেও কাজে লেগেছে।
স/এষ্