যশোরের ঝিকরগাছা গদখালী ফুলচাষে শাহানারার দারিদ্র্য জয়

যশোরের ঝিকরগাছা গদখালী ফুলচাষে শাহানারার দারিদ্র্য জয়

মনির হোসেন বেনাপোল প্রতিনিধি ।। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের মেয়ে জীবনটা ছিল দুর্বিষহ, ছিল অসহনীয় দারিদ্র্য। শুন্য নয় বিয়োগ থেকে শুরু করতে হয়েছিল জীবনসংগ্রাম।

সেই জীবনটা আজ অনেকটা ফুলের মতো। অবশ্য এইখানে পৌঁছাতে তাকে অনেক কাঁটার আঘাত সহ্য করতে হয়েছে। বলছিলাম জীবন সংগ্রামে জয়ী নারী শাহানারা বেগমের কথা।

পুরুষশাসিত সমাজের শাহানারা বেগম শুধু দারিদ্র্য ঘোছানোর জন্য নজির নয়, তিনি এখন রীতিমতো স্বাবলম্বী, সাজানো-গোছানো পরিবারের কর্তা। শাহানারা বেগম একজন ফুলচাষী। নারী জগতে দারিদ্র্য জয়ের মডেল তিনি। এখন এলাকার নারীসমাজের প্রেরণা।

১৯৮২ সালে শাহানারা বেগম মুসলিম শরিয়া মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের পটুয়াপাড়া গ্রামের শাহ আলম টিটুর সঙ্গে।

শাহানারার পিতৃলয়ও একই গ্রামে। স্বামী শাহ আলম টিটো পেশায় ছিল একজন ক্ষুদ্র তরকারি ব্যবসায়ী। স্বামীর ক্ষুদ্র ব্যবসার স্বল্পআয়ের কুঁড়েঘরে সুখে-দুখে মধ্যে তাদের সংসারে জন্ম নেয় তিনটি সন্তান।

বড় সন্তানটি কন্যা, মেজ সন্তানটি পুত্র আর ছোট কন্যা সন্তানটির বয়স যখন মাত্র ৯ মাস তখন বিধিবাম তাকে ফেলায় এক কঠিন পরীক্ষায়। স্বামী শাহ আলম টিটো মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।

১৯৯৭ সালে এক পর্যায়ে স্বামী শাহ আলম টিটো ভারতের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রেখে যান ৯ মাসের শিশু কন্যা ও অবুজ সন্তান, বৃদ্ধা মা ও শাহানারার কাঁধে দিয়ে যান সাড়ে ৫ লাখ টাকার দেনার বোঝা।

সম্বল হিসেবে রেখে যান মাত্র কয়েক বস্তা গ্লাডিউলাস ফুলের বীজ। শাহানারার জীবনে নেমে আসে এক অপ্রত্যাশিত আধ্যায়। নিরুপায় শাহানারার সন্তানদের মুখে অন্ন তুলে দিতে অবলম্বন হিসেবে তখন বৃদ্ধা শাশুড়ি গ্রামে ভিক্ষাবৃত্তি করেছেন। এক পর্যায়ে শাহানারা স্বামীর মৃত্যুর তিনদিন পরে শুরু করেন জীবনের নতুন সংগ্রাম।

গ্রামবাসী এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ফুল চাষের নেমে পড়েন। আর এই ফুল চাষের মাধ্যমে শাহানারা খুঁজে পান জীবনসংগ্রামে দারিদ্র্য ঘুছিয়ে সংসারে এক অফুরন্ত ফুলের সুবাস। পেছন ফিরে আর তাকে তাকাতে হয়নি।

বর্তমান শাহানারা প্রায় ১০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেন। যার মধ্যে সে এখন ক্রয় সূত্রে ৬ বিঘা জমির মালিক নিজেই। স্বামীর ইচ্ছা অনুযায়ী বাস্তভিটা রেখে রাস্তার পাশে ১৫ শতক জমি কিনে প্রাচীর নির্মাণ করে তৈরি করেছেন পাকা বাড়ি।

শাহানারা বছর ২ বিঘা জমিতে গ্লাডিউলাস, গাঁদা ও আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করছেন। তিনি নিজেই ফুল চাষের সব পরিচর্যা করেন। ফুল কাটা, বাঁধা, প্যাকিংসহ বাজারে বিক্রি করেন।

ফুল বিক্রির জন্য ঢাকা, সিলেটসহ দেশের নানা শহরে পাঠান। ছেলে শাহ জামালকে কিনে দিয়েছেন বড়ো মোটরসাইকেল। শাহানারা ফুলচাষের সাথে সংসারে প্রয়োজনীয় ধান-পাটের চাষও করেন। বছরান্তে প্রায় ৩ লাখ টাকা জমাতে পারেন।

শাহানারা খাতুন ২০১৬ সালে তীর-প্রথম আলোর সেরা নারী কৃষকের পুরস্কার পান। তার আগের বছর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আর্থিক স্বাবলম্বী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হন।

যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের আব্দুর রহিম বলেন, জীবন সংগ্রামে জয়ী শাহানারা খাতুনের জীবনের গল্পটা অনেকটা গল্পের মতো। ফুল চাষ করে ফুলের মতো আজ তার জীবন।

ঝিকরগাছা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অনিতা মল্লিক বলেন, জীবন সংগ্রামে জয়ী শাহানারা খাতুন একটি উদাহরণ। তাকে আমরা শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচন করেছিলাম।

স/এষ্