বেনাপোলে ঈদের ছুটিতে ভারত ভ্রমণ, ফেরায় স্থল বন্দরে যাত্রীদের চাপ

বেনাপোলে ঈদের ছুটিতে ভারত ভ্রমণ, ফেরায় স্থল বন্দরে যাত্রীদের চাপ

মনির হোসোন, বেনাপোল প্রতিনিধি ।। ঈদ ঘিরে বাংলাদেশিরা ভ্রমণ করেছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। এতে যশোরের বেনাপোল চেকপোস্টে যাত্রীদের চাপ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেকটা বেড়ে গেছে।

এখন ফিরতে শুরু করেছেন যাত্রীরা। ঈদের এই সময়টাতে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি চিকিৎসা ও ব্যবসার কাজেও অনেকে ভারতে গেছেন। তবে উভয় দেশের ইমিগ্রেশনে সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা।

তবে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও চেকপোস্টে কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে হতাশা আর অসন্তোষ জানিয়েছেন যাত্রীরা। অভিযোগ রয়েছে দালালদের হয়রানি নিয়েও। বর্তমানে বেনাপোলে দুই পাশের ইমিগ্রেশনের কাজ সারতে যাত্রীপ্রতি প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশও করছেন যাত্রীদের অনেকে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সেবার মান বাড়াতে তারা কাজ করছেন। হয়রানি এড়াতে যাত্রীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, ১২ জুন থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত ৫ দিনে মোট ৩৮ হাজার ৪৮০ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী দুদেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে প্রবেশ করেছেন ২০ হাজার ১৩৭ জন। আর ভারত থেকে ফিরেছেন ১০ হাজার ৩৪৩ জন। গতকাল বেনাপোল দিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রায় ৮ হাজার যাত্রী।

প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাতায়াত করেন। ভ্রমণ কর বাবদ বাংলাদেশ সরকারের বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ও ভিসা ফি বাবদ ভারত সরকারের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আয় হয়। ভ্রমণের ক্ষেত্রে বছরে বছরে এ অর্থের পরিমাণ দুই দেশে বাড়ালেও সেবার মান বাড়ছে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

তারা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন সকালের জায়গায় ভোর ৪টার মধ্যে বন্দরে ভিড়ছে দূরপাল্লার সব যাত্রীবাহী বাস। তবে যাত্রীরা দ্রুত পৌঁছালেও বন্দর সকাল সাড়ে ৬টায় খোলায় তাদের দীর্ঘসময় সড়কের ওপর লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে, ভারত অংশে জনবল সংকটের কারণে ইমিগ্রেশনে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন যাত্রীসেবা না দিয়ে বারবার বিএসএফের তল্লাশির কারণে দেরি হচ্ছে। ইমিগ্রেশনটা নিয়ন্ত্রণ করে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছেন বিএসএফের কাছে।

বেনাপোল নো-ম্যান্সল্যান্ডে জাকির হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, এবার পরিবার নিয়ে ভারতে ঈদের ছুটিতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছি। পেট্রাপোল চেকপোস্টে অফিসাররা ধীরগতিতে কাজ করায় আমাদের অনেক সময় লাগছে।

মোস্তাফিজুর রহমান নামে আরেক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, যাবার দিন বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শেষ করতে মাত্র কয়েক মিনিট লাগলেও পেট্রাপোল নোম্যান্সল্যান্ডে রৌদ্রের মধ্যে দুই তিন ঘণ্টার ওপরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ফিরতে গিয়েও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

পাসপোর্টযাত্রী মেহেরুন আফরোজ চুমকি বলেন, ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশ সরকার নিচ্ছে ১০৫৫ টাকা ভ্রমণ কর ও ভিসা ফি বাবদ ভারতীয় দূতাবাসগুলো নিচ্ছেন ৮৫০ টাকা। ভিসার চেয়ে ভ্রমণ কর বাড়লেও সেবা বাড়েনি যাতায়াতে। বন্দরের কার্যক্রম ভোর ৫টার মধ্যে শুরু হলে দুর্ভোগ অনেকটা কমবে।

পাসপোর্টযাত্রী সুশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, ভ্রমণ কর বাড়লেও সেবা নেই। ৫-৬ ঘণ্টা লাগছে ইমিগ্রেশন সারতে। রয়েছে দালালদের হয়রানি। নিরাপত্তাকর্মীদের চোখের সামনে এসব ঘটছে।

বেনাপোল স্থলবন্দর আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশের ইনচার্জ বাদল চন্দ্র রায় জানান, ঈদে যাত্রীচাপ বেড়েছে। ভোগান্তি কমাতে দালাল শ্রেণির কাছে পাসপোর্ট না দিতে যাত্রীদের বলা হয়েছে।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ঈদুল আজহার ছুটিতে ৫ দিনে ৩৮ হাজার ৪৮০ জন যাত্রী দুদেশের মধ্যে আসা-যাওয়া করেছেন। স্বাভাবিক সময়ে এ সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৪ হাজারের মধ্যে থাকে।

তবে এবার রেকর্ড সংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করেছেন। যাদের অধিকাংশই ঈদ উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটির কারণে ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছেন। গতকাল থেকে যাত্রীরা আবার ফিরতে শুরু করেছেন। এদিন প্রায় ৮ হাজার যাত্রী এসেছেন।

তিনি আরও বলেন, পেট্রাপোল (হরিদাসপুর) চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে তাদের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে জানানো হয়েছে, ইমিগ্রেশনে দেরি হচ্ছে না। দেরি হওয়ার মূল কারণ বিএসএফের তল্লাশি।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম জানান, যাত্রীসেবার মান বাড়াতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকেও সেবা বাড়াতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

স/এষ্