আল্লামা শফী হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক: ধর্মভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ও উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার ও বিচারকার্য দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের শফিপন্থীরা।
বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন আহমদ শফীর অনুসারীরা। সেখানে শফীর ছোট ছেলে আনাস মাদানী এ দাবি জানান।
আল্লামা আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা মনে করি- শাইখুল ইসলাম শহীদ আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে শহীদ করে বিভিন্ন কওমি মাদরাসা এবং হেফাজতে ইসলামকে একটি চিহ্নিত মহল তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিজেদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে গভীর ষড়যন্ত্র করছে।
এসবের নেতৃত্বে মূলত হেফাজতের গুটিকয়েক নেতা এবং চিহ্নিত কিছু চরমপন্থী রয়েছে। হাটহাজারী মাদরাসায় আন্দোলনের নামে আল্লামা শফীর রুম ভাঙচুর এবং তার ওপর মানসিক চাপ, অসৌজন্যমূলক আচরণ, মেডিসিন নিতে বাধা প্রদান, তার চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটানো- এসবই ছিল তাদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-১. বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে আল্লামা শাহ আমদ শফীর ‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর’ রহস্য উদঘাটন করে এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২. তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা মামলা তদন্তপূর্বক অবিলম্বে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে হবে।
৩. আল্লামা শফীর পরিবারের সদস্যদের ও তার অনুসারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. আহমদ শফীর রেখে যাওয়া সব দ্বিনি ও সামাজিক অঙ্গনগুলো থেকে তার বিরোধীদের অপসারণ করতে হবে।
৫. অবিলম্বে দেশের সব হিফজ-মক্তব মাদরাসা খুলে দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা আহমদ শফীর শ্যালক মাইনুদ্দিন, ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা আবদুল হামিদ (মধুপুরী পীর), মুহাদ্দিস মাওলানা নুরুল ইসলাম জাদিদসহ হেফাজতের বিভিন্ন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে আল্লামা শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। মামলা আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। চট্টগ্রামে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এ মামলাটি করেন আল্লামা আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন।
২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন আল্লামা শফী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর।
আল্লামা শফীকে হত্যার অভিযোগ এনে ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দের আদালতে মামলার আবেদন করেন তার শ্যালক মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
মামলায় হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হককে আসামি করা হয়। অন্য অভিযুক্তরা হলেন- নাছির উদ্দিন মুনির, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মীর ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নুরুজ্জামান নোমানী, আব্দুল মতিন, মো. শহীদুল্লাহ, মো. রিজওয়ান আরমান প্রমুখ। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৮০-৯০ জনকে আসামি করা হয়।