বিএনপির নতুন জোটের খবরকে পাত্তা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ
বিশেষ প্রতিনিধি: কৌশলগত কারণে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও কার্যত ২০ দলের বাইরে একটি নতুন জোট গঠন করতে যাচ্ছে বিএনপি। এই জোটকে নিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হতে চায় দলটি। অবশ্য এই নতুন জোটের খবরকে কোনোভাবেই পাত্তা দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপি এখন লক্ষ্যহীন পথে হাটছে। তাদের রাজনীতি করার কোনো লক্ষণ নেই। নাম সর্বশ্ব দল নিয়ে জোট করে কোনো লাভ হবে না। তারা যদি জোট গঠন করে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়, তার সমুচিত জবাব দেবে আওয়ামী লীগ।
তারা বলেন, অতীতেও বিএনপির ২০ দলীয় জোটকে জনগণ প্রত্যান করেছে। নতুন যে জোট হবে সেটিও স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে। ফলে এই জোটও দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। তাদের এই জোট ‘পুরানো বোতলে নতুন মদ’। ফলে আওয়ামী লীগ এসব নিয়ে ভয় কখনো পায়নি। ভষ্যিতেও পাবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধের পথে এগুচ্ছে। সরকারের সঙ্গে দেশের জনগণ রয়েছে। তাদের যে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। ফলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি কর্মসূচির নামে যদি কোনো ষড়যন্ত্র করে তার জবাব রাজপথে দেবে আওয়ামী লীগ।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, বিএনপির জোট গঠন এটি নতুন কিছু না। তারা হতাশাগ্রস্থ নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বিভিন্ন ধরণের কৌশল অবলম্বন করে। এটি তারই একটি অংশ। তাদের এই জোট ‘পুরানো বোতলে নতুন মদ’। তারা অতীতেও স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে জোট করেছে। নতুন জোট হলে সেটিও স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়েই হবে। দেশের ১৬ কোটি মানুষ শেখ হাসিনার উন্নয়নে বিশ্বাস করে। দেশের জনগণ শেখ হাসিনার পক্ষে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৬ কোটি মানুষের ভালোবাসা ও ভোটে আবারও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি নতুন জোট করবে ভালো কথা। কিন্তু নতুন জোট কর্মসূচির নামে দেশে কোনো নৈরাজ্য বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়, সেক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। তারা তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগও এই স্বাধীনতা বিরোধী ও উগ্র জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবে। তাদের কোনো ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করবে না আওয়ামী লীগ।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, বিএনপি নতুন জোট করলে তাতে আওয়ামী লীগের কি আসে যায়। আর বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলা করার কোনো প্রয়োজন নেই। নাম সর্বশ্ব দল নিয়ে জোট করে কোনো লাভ নেই। এরশাদের আমলে দেখেছি ১২৬ দলীয় জোট হয়েছে। কি হয়েছে, তাতে। তারা ১২৬ দলের জোট গঠন করেও একটি আসন পায়নি। অর্থাৎ নাম সর্বশ্ব দলের জোটে আওয়ামী লীগের কিছু আসে যায় না। আর তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করবে করুক। সরকারের সঙ্গে দেশের জনগণ রয়েছে। যতদিন জনগণের সমর্থন শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকবে ততদিন সরকারে আওয়ামী লীগ থাকবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করবে না। তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে তারা কিছু করতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞাণ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর বলেন, আমরা বিএনপি-জামায়াতের আগের জোট দেখেছি। সেই জোট সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কর্মকাণ্ড ছাড়া আর কিছু করতে পারেনি। তবে নতুন জোট যেটি হবে, তার উদ্দেশ্য যদি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হয়, আমরা স্বাগত জানাবো। অতীতে দেখেছি তারা দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাধাগ্রস্থ করতে বিভিন্ন জোট করেছে। কিন্তু তারা ওই জোট ধরে রাখতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না। ড. কামাল হোসেনসহ অতি ডান-বামদের নিয়ে জোট দেখেছি। স্বাধীনতার আগে ও পরেও অনেক জোট দেখেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বরং স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। তারা যত জোট করুক কোনো লাভ নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাধারণ জনগণ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধকে বিশ্বাস করে। তাই তাদের সব ধরণের ষড়যন্ত্র আমরা দেশের জনগণকে নিয়ে মোকাবেলা করবো।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, বিএনপি কত কিছুই করে। তারা করুক না। এগুলো তাদের বাগাড়ম্বর ছাড়া আর কিছু নয়। দলটি প্রথম থেকেই লক্ষ্যহীন পথে হাটছে। তারা মূলত লক্ষ্য নির্নয় করতে পারছে না। অন্ধকার বা ঝড় ঝঞ্জার রাতে একজন নাবিকের যে অবস্থা হয়। বিএনপির অবস্থা তেমনই হয়েছে। তাদের মধ্যে রাজনীতি করার কোনো লক্ষণ দেখছি না। তবে আমরা আশা করছি, তারা লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিএনপি যে নতুন জোট গঠন করতে যাচ্ছে তাতে আওয়ামী লীগের কিছু আসে যায় না। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে মাহাজোট আছে, এর বাইরে আর কোনো জোট হবে না। তাদের জোট মানে বিএনপি একটি সংখ্যা। আর অন্যরা হলে কয়েকজন লোক নির্ভর দল। তাদের নেতাও বলা যাবে না। তারা বিচ্ছিন্ন কয়েকটি দল। এই জোট মাণে শূণ্য। শূণ্য সব সময় শূণ্যই হয়। তাদের আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। এই জোট স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে। ফলে স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, বিএনপির রাজপথের অভিজ্ঞতা আওয়ামী লীগ জানে। রাজপথ দখল করবে, সেই ক্ষমতা বিএনপির নেই। তাদের যে কোনো ষড়যন্ত্র রাজপথে শক্তভাবে জবাব দেবে আওয়ামী লীগ। গত ২০১৪ সালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পর যেভাবে আওয়ামী লীগ তাদের ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। এবারও তারা রাজপথে নেমে কোনো যানমালের ক্ষতি করলে, শক্ত হাতে জবাব দিয়ে ঘরে তুলে দেওয়া হবে।
এস/এ