বিএনপি হার্ডলাইনে গেলে কি করবে আওয়ামী লীগ?

বিএনপি হার্ডলাইনে গেলে কি করবে আওয়ামী লীগ?

বিশেষ প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগ আইন সংসদে পাশ হয়েছে। যদিও আইনটির বিরোধীতা করে আসছে বিএনপি। দলটি বলছে, এটি আইওয়াস। কিন্তু গত ২৭ জানুয়ারি পাশ হওয়া আইনের ভিত্তিতেই নিয়োগ হচ্ছে ইসি। সঙ্গত কারণে বিএনপি বলছে, এই ইসি ও বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে না। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ নানা ইস্যুতে কর্মসূচির মাধ্যমে হার্ডলাইনে যাবে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিএনপি হার্ডলাইনে গেলে কি করবে আওয়ামী লীগ?

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, বিএনপি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে। তারা দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজেদেরটা বেশি দেখে। বিএনপি যারা পরিচালনা করে, বিদেশি শক্তি বা প্রভু, তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য সবকিছু করতে পারে। বিদেশিদের সন্তুষ্ট করেই তারা ক্ষমতার পালাবদলে বিশ্বাস করে। জনগণের আস্থায় গিয়ে ভোটের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার চিন্তা করে না। এ কারণে তারা দেশের মানুষের অধিকার, চাহিদা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে রাজনীতি করে না। তারা যতই ষড়যন্ত্র করুক, আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে তা মোকাবেলা করবে।

তারা বলেন, বিএনপি খুনিদের অবস্থান দিয়েছে। খুনিদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে। দেশ-বিদেশে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। এত কিছুর পরও সেই অপশক্তি একই ধারায় চালাচ্ছে। তারা সফল হচ্ছে না। কিন্তু ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। আমরা ধরেই নিয়েছি, এরা ষড়যন্ত্র করবে। যেনতেনভাবে ক্ষমতা ধরাই তাদের টার্গেট। দেশের মানুষের কতটুকু মঙ্গল হলো কি হলো না, সেটি তারা ভাবে না। তারা গোষ্ঠীকেন্দ্রিক ও স্বার্থের রাজনীতি করে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে, যেটি হাইকোর্টের মাধ্যমে মিমাংসিত ইস্যু। কারণ এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আর নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইনটি গত ৫০ বছরের ঝুলে থাকা আইন। এটি কোনো সরকার পারেনি। যেটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার করেছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি রাজনৈতিক দল। গত ৫০ বছরের ঝুলে থাকা নির্বাচন কমিশন আইন এই দলের মাধ্যমেই পাশ হয়েছে। একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল হিসেবে এই আইনটি প্রতিপালন করা নৈতিক দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ ও দলের নেতাকর্মীদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধের পথে এগিয়ে যাবে। বিএনপি এমনই একটি রাজনৈতিক দল, তারা সবকিছুতেই বিরোধীতা করে। তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধীরে ধীরে জনগণ থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতে যাতে আরও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, সেই কাজগুলোই করছে। আমরাও চেষ্টা করবো, তাদের নেগেটিভ কাজগুলো জনগণের কাছে পৌছে দেওয়ার। যাতে তারা আরও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। এদেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনে আসা না আসা তাদের বিষয়।

তিনি বলেন, বিএনপির যে কোনো প্রতিহিংসার কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবে আওয়ামী লীগ। আমাদের রাজনীতি জনগণের সঙ্গে। জনগণই আওয়ামী লীগের সম্পদ। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড মোকাবেলা করবে। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কাজ করবে। তারা গত ১৩ বছরেও কোনো আন্দোলন সংগ্রামে সফল হতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বিএনপি বিচার মানে, কিন্তু তাল গাছ আমার’। বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম মানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও তার মুক্তি। তারেক রহমানে মুক্তি। এর বাইরে তারা কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি। তারা আর কোনা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আসতে পারবে না। কারণ তাদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা শুধু হুমকি ধমকি দেয়। কিন্তু মাঠে থাকতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না। আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তাদের যে কোনো ষড়যন্ত্র কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

তিনি বলেন, গত ৫০ বছরের যেটি হয়নি, সেই নির্বাচন কমিশন আইন এই সরকার পাশ করেছে। তাদেরই বুদ্ধিজীবী ড. স্বাধীন মালিক বলেছিলেন, ১৫ দিনের মধ্যে ইসি আইন করা সম্ভব। যখন আইনটি পাশ হলে তখন তিনি বলছেন, এত দ্রুত সময়ে এটি করা ঠিক হয়নি। আসলে তারা কখন কি বলেন তা বলা মুসকিল।  এই আইনের মাধ্যমেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুটি কোর্টের মাধ্যমে মিমাংসিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা অনেক দাবি করবে। কিন্তু তাদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের সম্পর্কে দেশের মানুষ জানে। তারা মানুষ খুন করেছে। পশু পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আদালতে বোমা হামলা করেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের হত্যা করেছে। তাই আন্দোলন-সংগ্রামের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, আওয়ামী লীগ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া একটি দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করেছে। খালেদা জিয়ার আমলে দুর্নীতিতে ৫ বার প্রথম হয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে। কিন্তু তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়ডন্ত্র করছে। দেশের র‌্যাব, সেনাবাহিনী জাতিসংঘে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। সেই বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা লবিং করে। তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে লবিস্ট নিয়োগ করে। এই দলটি দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে দেশের বিরুদ্ধে নিবন্ধ লিখেছেন। আসলে বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেন, আমাদের মাথা পিছু আয় ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। দেশে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিদ্যুতের কোনো লোডশেডিং নেই। পদ¥াসেতু, মাতারবাড়ি, কর্ণফুলি টার্নেলসহ অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। কোনো মানুষ এখন আর না খেয়ে থাকে না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের দল। আর বিএনপি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের দল। এটাই বাস্তবতা। আওয়ামী লীগের প্রধান কাজ স্বাধীনতাকে রক্ষা করা ও সংবিধান সমুন্নত রাখা। বিএনপির গায়ে এখনও বোমার গন্ধ। তাদের গায়ে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের ছবি। তারা যদি আগামী দ্বাদাশ নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, সেখানে আওয়ামী লীগও বসে থাকবে না। কারণ আওয়ামী লীগ আন্দোলন সংগ্রামের একটি দল। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজকের আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের যে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ মোকাবেলা করবে। একই সঙ্গে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের যে কোনো সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের কর্মকাণ্ড মোকাবেলা করবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে কমপ্রোমাইজ করে না। প্রয়োজনে জীবন দেবো, কিন্তু কোনো সন্ত্রাসবাদকে মেনে নেবো না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবন দিয়ে গেছেন, কিন্তু কমপ্রোমাইজ করেননি। তারই সুযোগ্য কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্বাধীনতা রক্ষা ও সংবিধান সমুন্নত রাখতে কোনো আপসো করবেন না।

এস/এ