সারের দাম নিয়ন্ত্রনে রাখতে আগামী ১৫ দিন মোবাইল কোর্ট

সারের দাম নিয়ন্ত্রনে রাখতে আগামী ১৫ দিন মোবাইল কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারের দাম নিয়ন্ত্রনে রাখতে আগামী ১৫ দিন উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার কথা জানিয়েছেন কৃষমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সার পরিস্থিতি নিয়ে শিল্প মন্ত্রনালয় ও সার ডিলারদের সাথে বৈঠকের পর তিনি এ তথ্য জানান।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশের পর্যাপ্ত সার মজুদ আছে। এর পরেও এক শ্রেনীর অসাধু ডিলারের যোগ সাজসের কারনে কৃষকদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছিলো। আমাদের বৈঠক থেকে আমরা সিদ্ধান্তে নিয়েছি আগামী ১৫ দিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো।
তিনি বলেন, আমরা সারের মজুদ পরিস্থিতি বিস্তারিত আলোচনা করলাম। কয়েকটি গণমাধ্যমে এসেছে অনেক এলাকায় চাষীরা সার পাচ্ছে না, প্রয়োজনীয় সারের ঘাটতি রয়েছে। সরকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি জানেন এবং আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে। আমরা যেটা দেখলাম কোনো কোনো এলাকায়, এলাকা ভিত্তিক পরিবহন সমস্যার কারনে সারগুলো ঠিক মতো যায় নি। ডিলার ও দোকানদাররাও এ সুযোগটা নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে, বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়েছে এবং শিপিং কস্ট অস্বাভাবিক বেড়েছে। কি এমন ঘটেছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে ইউরিয়ার দাম তিনগুন বেড়েছে। এটা একটা আন্তর্জাতিক চক্র সুপরিকল্পিতভাবে সারের দাম বাড়িয়ে আমাদের শোষণ করছে। এই সুযোগ তারা নিচ্ছে। খুব সহযেই মানুষের মাঝে গুজবটি ছড়ায় যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম এতো বেশি কাজেই সারের দাম বাড়তেই পারে। চাষীরা মনে করেছে, কয়েকদিন পরে হয়তো সার পাওয়া যাবে না তাই তারা প্যানিক বাই করেছে। এমনিতেও সার্বক্ষণিকভাবে আমরা পরিস্থিতি মনিটরিং করছি। আমাদের মাঠ কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেয়া আছে তারপরেও কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যাতয় ঘটে থাকে।
মন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত ইউরিয়ার লক্ষ্যমাত্রা হলো ২৬ লাখ মেট্রিক টন। জুলাই মাসে আমাদের মজুদ ছিলো ৭ দশমিক ৬৯ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে আমাদের মজুদ আছে ৮ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর এটা ছিলো ৯ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন। মজুদ গত বছরে এই সময়ে যা ছিলো তার চেয়ে কম। এটা আমাদের বোরো মৌসুম। এ সময়েই সারের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। আমরা এটুকু বলতে পারি, আমরা সতর্ক ছিলাম। মজুদ পরিস্থিতিতে মোটেই বিপর্যয় ঘটে নি। আমরা যেভাবে প্ল্যান করেছিলাম সেভাবেই এগুচ্ছি।
তিনি বলেন, টিএসপির চাহিদা আমরা নির্ধারন করেছি ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে মজুদ আছে ১ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন। ডিএপির চাহিদা নির্ধারন করা হয়েছে ১৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, মজুদ আছে ৫ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। এমওপির চাহিদা ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, মজুদ আছে ৩ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন। পাইপলাইনে যে সার আমাদের সরকারি ও বেসরকারি খাতে রয়েছে তাতে করে আমাদের কম হওয়ার কোনো কারন নেই। পরিবহন নিয়ে কিছু সমস্যা ছিলো কিন্তু গত দুই তিনদিনে এটা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আমরা আশা করছি, রেলের সাথে আমরা একটি সমঝোতায় গিয়েছি তাতে মনে হয় না পরিবহনে কোনো সমস্যা হবে।

পাইপলাইনে আমাদের টিএসপি আছে ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, ডিএপি ৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, এমওপি ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। আমি এটুকু আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে চাই, সামান্যতম আমাদের মজুদে কোনো সমস্যা নেই। পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে। পাইপলাইনে যেটা রয়েছে আগামী জুলাই পর্যন্ত আমাদের কাছে পর্যাপ্ত সারের মজুদ থাকবে এবং বেশি থাকবে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে বিপুল সারের ঘাটতি রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সার সংগ্রহ করতে পারেনি। আসামের সরকার পত্রপত্রিকার মাধ্যমে চাষীদের বলেছে তারা যেন সার কম ব্যবহার করে এবং অর্গানিক সার যেন ব্যবহার করে।

আমরা মিটিংয়ে এখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের একদম ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা পর্যায়ের তারা যেন সার্বক্ষনিক মনিটরিং করে। যেসব ডিলার ও বিক্রেতা বেশি দামে বিক্রি করবে তাদেরকে তাৎক্ষণিক চিহ্নিত করে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা একদম চিঠি দিয়ে ডিসি এসপির সহযোগীতা নিয়ে অব্যাহত ভাবে ১৫ দিন মোবাইল কোর্ট করবো সারের জন্য। অসাধু ডিলার ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেবে।

শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, আমাদের কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পর্যাপ্ত সার মজুদ আছে। অপপ্রচার বিভিন্ন ভাবে ছড়াচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি এগুলো তাৎক্ষনিক সমাধান করতে। আমরা এ জন্যই আজ বসেছি যাতে সার নিয়ে আগের মতো কোনো ধরনের সংকট তৈরি না হয়।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল আশরাফ খান বলেন, এখনো পর্যন্ত সারের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত সার আমাদের কাছে মজুদ আছে। প্রত্যেকবারই মৌসুমের সময় এই সারের দাম একটু এদিক সেদিক হয়। এটা বড় কোনো সমস্যা না। পাশের দেশের তুলনায় আমাদের সার পরিস্থিতি ভালো।

আমাদের পরিবহনের টেন্ডারগুলো দেয়া বেশ আগে থেকে। অনেক কম দামে। জাহাজ ভাড়া প্রতি টনে ১৬৫ ডলার বেড়েছে, ট্রাক ভাড়া বেড়েছে তারপরেও আমরা কম রেটে সার পরিবহন করছি। কোথাও পরিবহনের জন্য সারের ঘাটতি হয় নি।

আমাদের যে সদস্যরা সারের দাম বৃদ্ধি করছে তাদের সদস্য পদ আমরা বাতিল করে দেবো।

এস/এ