খালেদার বিদেশে চিকিৎসায় আইনি জটিলতার দায় নেবে না আওয়ামী লীগ
বিশেষ প্রতিনিধি: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবার তাকে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে নিতে চায়। কিন্তু তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে আইনি জটিলতা রয়েছে। ফলে তিনি যতই অসুস্থ হোক না কেন, আইনি জটিলতা শেষ না করে তাকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব নয়। যদিও মানবিক দিক বিবেচনায় ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএনপি ও তার পরিবার। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কেনো সায় পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে খালেদা জিয়া আইনি জটিলতায় বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে না পারলে দায় নেবে না আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন হলেও তাদের কি করার আছে। তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার চিকিৎসা তো দেশেই ভালো হচ্ছে। আর আওয়ামী লীগও চায় তার চিকিৎসা হোক। তিনি সুস্থ হন। কিন্তু আইনি জটিলতার জন্য যদি তার বিদেশে চিকিৎসা না হয়, এর দায় আওয়ামী লীগ নেবে কেন?
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতারা জানান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য অযথাই বিএনপি নেতারা চিৎকার করছেন। যদি আইনি জটিলতা থাকে সেখানে সরকারের কি করার আছে। আর আওয়ামী লীগই বা কি করবে? তারা মানবিকতার কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো মানবিক দিক বিবেচনা করেছেন। তার সাজা স্থগিত করে বাসায় থেকে চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছেন। আইনের কাছে মানবিকতা সব সময় দেখানো যায় না। এটা বিএনপি নেতাদের বোঝা উচিৎ। তবে খালেদার বিদেশে চিকিৎসার নামে বিএনপি যে আন্দোলন করছে, সেটি সরকার ও আওয়ামী লীগকে চাপে রাখার জন্য। তারা আওয়ামী লীগ ও সরকারকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে হেয় প্রতিপন্্ন করতে চায়। বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে জনগণের সহানুভূতি পেতে চায়। কিন্তু দেশের জনগণ এখন আর তাদের সঙ্গে নেই। তাদের কর্মসূচি থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এখানে মানবিকতার প্রশ্নই আসে না। মানবিকতারও একটা সীমা রেখা রয়েছে। তাকে তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতা দেখিয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী সংবিধান অনুযায়ী দেশ চালান। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অনেক আসামিই অসুস্থ রয়েছেন। সেখানে খালেদা জিয়াকে আলাদা করে দেখার কি আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুন করা হয়েছে। জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে খুন করা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে? তখন দায় কোথায় ছিলো? আওয়ামী লীগ দায় বোঝে না। খালেদা জিয়া আগের চেয়ে ভালো আছেন। তার দেশে ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। যতটুকু জেনেছি, তারা দেশের বাইরের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলছেন। প্রয়োজনে তাদের দেশে এনে চিকিৎসা করুক। খালেদা জিয়া জীবনে তো কম টাকা কামাই করেননি। দুর্নীতিতে ৫ বার চ্যাম্পিয়ান হয়েছেন। সেই টাকা খরচ করুক। শুধু খোচাখুচি করে লাভ নেই। আমরা চাই তিনি স্বাভাবিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠুন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি নেতারাই চায় না, খালেদা জিয়া সুস্থ হোক। তার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে। আমরাও চাই তিনি দ্রুত সুস্থ হন। কিন্তু তিনি আইনি জটিলতার জন্য যদি বিদেশে যেতে না পারেন, সে দায় আওয়ামী লীগ নেবে কেন? তিনি তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে দেওয়া মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দেশের নামকরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরাতো কিছু বলছেন। প্রয়োজনে তারা বিদেশ থেকে চিকিৎক এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুক। বিএনপির উচিৎ খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি না করে চিকিৎসায় মনোযোগি হওয়া।
গত বুধবার এক সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে যে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, সে জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দেওয়া মামলায় বেগম জিয়ার শাস্তি হয়েছে। সুতরাং আইন তো তাঁকে মানতেই হবে। মানবিকতা যা করার সেটি করা হয়েছে।
এস/এ