রুট পারমিটবিহীন বাস জব্দ করা হবে; গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনবো: তাপস

রুট পারমিটবিহীন বাস জব্দ করা হবে; গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনবো: তাপস

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা শহরে চলাচল করা রুট পারমিটবিহীন বাস জব্দ করা হবে। এছাড়াও যে কোন মূল্যে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

রবিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ১৯তম সভা শেষে সাংবাদিকদেরকে এ তথ্য জানান ঢাদসিক মেয়র ও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “ঢাকা শহরের গণপরিবহনে বিশৃংখলা রয়েছে। সেজন্য আমরা আরো কঠোর হবো। আমরা দেখেছি — রুট পারমিট নেওয়া হয় একটি যাত্রাপথে কিন্তু সেই যাত্রাপথে বাস না চালিয়ে অন্য যাত্রাপথে পরিচালনা করা হয়। এখন থেকে যৌথ অভিযানের আওতায় আমরা সেসব বাসের বিরুদ্ধে কার্যক্রম নেবো এবং এক রুটের বাস অন্য রুটের পরিচালনা করা যাবে না। রুট পারমিট যে যাত্রা পথে নিয়েছে সে যাত্রা পথেই সেই বাস পরিচালনা করতে হবে। না হলে সেই বাস চলবে না। সুতারাং আমরা এখন অত্যন্ত কঠোর। আমরা ঢাকা শহরের গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনবোই আনবো।”

গণপরিবহনে পূর্ণ শৃঙ্খলার আনয়নে পুনর্বার কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “যে ১৬৪৬টি রুট পারমিটবিহীন বাস চিহ্নিত করা হয়েছে, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করব। সেই অভিযান হবে কঠোর অভিযান। রুট পারমিটবিহীন যে সকল বাস আমরা পাবো, আমরা সেগুলো জব্দ করবো। শুধু জরিমানা না, আমরা যেখানে রুট পারমিটবিহীন অবৈধ বাস পাবো, সেগুলো আমরা জব্দ করবো এবং সেগুলো ধ্বংস করে দেবো। যাতে করে এই গাড়িগুলো সড়কে আসতে না পারে।”

বাস মালিকদের অসহযোগিতা ও নানা বাঁধ-বিপত্তি অতিক্রম করেই বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ঢাদসিক মেয়র বলেন, “পহেলা ডিসেম্বর ঘাটারচর থেকে কাচপুর রুটে পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে বাস রুট রেশনালাইজেশনের মাধ্যমে বাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছিলাম। ১ ডিসেম্বর থেকে এই রুটে বাস চালুর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তা ফলপ্রসূ করা যায়নি। গণপরিবহনে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত যে বিশৃঙ্খলা, এই বিশৃঙ্খলায় অনেক অংশীজন রয়েছে। সকলকে শৃঙ্খলায় আনা অত্যন্ত দুরূহের কাজ। তারপরও আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এই কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আমরা সংকল্পবদ্ধ, এটাকে আমরা বাস্তবায়ন করবই।”

ঢাদসিক মেয়র বলেন, “ঢাকা শহরে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা আনার জন্য এই কমিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমরা দুই মেয়র দায়িত্ব পাওয়ার পর গত বছরের অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরু করি। এই করোনা মহামারীর মাঝেও আমরা সভা পরিচালনা করেছি এবং এই কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করার জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে চলেছি।”

পরীক্ষামূলক এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র বলেন, “আমরা এখন বিজ্ঞপ্তি দেবো। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে উদ্যোক্তা, অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আমরা আবেদন নেবো। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে বিআরটিসি’র ৩০টি সহ আমরা নতুন ১০০টি বাস নির্ধারণ করব।”

উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ইচ্ছার কোন ত্রুটি ছিল না সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলাম। পহেলা ডিসেম্বর বাস্তবায়ন করার জন্য। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমরা পারিনি। ‌এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে — বাস মালিকরা। আমাদের যেভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তারা সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেন নাই। এই প্রেক্ষিতে বিআরটিসি’র সহযোগিতায় আগামী ২৬ ডিসেম্বর হতে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত বাস চলাচল শুরু হবে।”

ডিএনসিসি মেয়র আরও বলেন, “প্রাথমিকভাবে এই রুটে ১০০টি গাড়ি চলাচল করবে। বিআরটিসি এই রুটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে ৩০টি বাস দেবে বলে নিশ্চিত করেছে। প্রতিটি বাস দোতলা বিশিষ্ট।”

সভায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদ, ঢাকা মেট্টোপলিটনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিনসহ কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এস/এ