বিএনপির উত্তেজনাকে ভয় পায় না আওয়ামী লীগ
বিশেষ প্রতিনিধি: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া লিভার, আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি ও হার্টসহ বিভিন্ন রোগে ভূগছেন। তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপি নেত্রী গুরুতর অসুস্থ। তাকে এই মুহুর্তে মানবিকতার দিক বিবেচনা করে হলেও বিদেশে পাঠানো জরুরি। তাদের দাবি, ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। ওই ক্ষমতা বলেই তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে পারেন।
ইতোমধ্যে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে ২০ দলীয় জোটের ৫টি দলের শীর্ষ নেতারা গত ২১ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর একটি স্মারক দেন। পরে ২৩ নভেম্বর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নেতারা আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে মানবিক দিক বিবেচনা করে বিদেশে পাঠানোয় আরও একটি স্মারক লিপি দেন।
এছাড়া খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে অনশন, আলোচনা সভা, সেমিনার, মানববন্ধনসহ একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কর্মসূচির নামে বিএনপি কোনো সহিংসতা করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
ক্ষতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ একাধিক নেতারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে দেশে গুজব বা কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা ও উত্তেজনা ছড়ালো রাজনৈতিকভাবে সময়োচিত জবাব দেবে। এসব উত্তেজনাকে ভয় পায় না আওয়ামী লীগ। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের জন্ম। এই দলের জন্ম বন্দুকের নল থেকে নয়। আমরা চাই না, তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো নিয়ে দেশে কোনো উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করুক। আর সেটি যদি হয়, তার সম্পূর্ণ দায় ভার বিএনপিকেই নিতে হবে। ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতা ইতিহাসের বিরল। শেখ হাসিনার মানবিকতার কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু একজনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারেন না। তারপরেও তিনি মানবিকতা দেখিয়ে বাসায় পরিবারের সঙ্গে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া একজন প্রতিহিংসা পরায়ন নেত্রী। খালেদা জিয়া বার বার শেখ হাসিনাকে মারার চেষ্টা করেছেন। তার পুত্রকে দিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করিয়েছেন। যদি আল্লাহর রহমতে শেখ হাসিনা বেঁচে গেছেন। কিন্তু আইভী রহমানসহ আমরা ২৪ জন নেতাকর্মীকে হারিয়েছি। এখনও শত শত নেতাকর্মীরা ২১ আগস্টের স্পিলিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে জীবন যাপন করছেন। তারপরেও প্রধানমন্ত্রী মানবিকতা দেখিয়েছেন।
তারা বলেন, আমরা চাই খালেদা জিয়া সুস্থ হন। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন তার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করছেন। দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার পায়তারা করছে। তারা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা দেশবাসির প্রতি আহ্বান জানাবো, আপনারা কোনো গুজবে কান দেবেন না। একই সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীরাও খালেদার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি না করে সুস্থ ধারায় ফিরে আসবেন বলেও মনে করেন তারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আদালতে দন্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে কি না সেটি ভেবে দেখা হবে। তিনি একজন শাস্তিপ্রাপ্ত আসামী। তিনি আদলতে জামিন পাননি। তার সাজা মওকুফ হয়নি। এসত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী আইনে প্রদত্ত প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে তাকে কারাগারের বাইরে থাকার সুযোগ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া প্রতিহিংসাপরায়ণ। প্রতিহিংসার বশেই তিনি ১৫ আগস্ট কেক কাটেন। তার পুত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করা হয়। তার পুত্রের মৃত্যুতে শোক জানাতে বাড়িতে গেলে প্রধানমন্ত্রী অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও দরজা খোলেননি। তারপরেও প্রধানমন্ত্রী সহমর্মিতা দেখিয়েছেন, তা বিএনপি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে আইনগত বাধা রয়েছে। আর বিএনপি মানবিকতার কথা বলছে, মানবিকতা তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন। শেখ হাসিনার মতো মানবিক গুণাবলির মানুষ বিশ্বে আর কেউ নেই। তিনি মানবিকতার কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। শুধু তাই নয়, তার সঙ্গে একজন সহকারি রাখারও অনুমতি দিয়েছেন। এখন যদি তাকে আবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়, সেটি বিচার বিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হবে। খালেদা জিয়াকে যদি এখন বিদেশের পাঠানো হয়, ভবিষ্যতে আরও অনেকে এই সুযোগ নেবে। একজনের জন্য তো আর আইন ভঙ্গ করা যায় না।
তিনি বলেন, যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। তখন বিএনপির মানবিকতা কোথায় ছিলো? এখন কেন তারা মানবিকতার কথা বলছেন। বিশ্বের কোথাও এমন নজির নেই, যেখানে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এস/এ