বানিজ্যিক বিজ্ঞাপনে জড়িত হবার আগে প্রয়োজন তারকাদের সচেতনতা

বানিজ্যিক বিজ্ঞাপনে জড়িত হবার আগে প্রয়োজন তারকাদের সচেতনতা

মিজানুর রহমান

অনেক দিন আগে ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, “তারকাদের বানিজ্যিক বিজ্ঞাপনের মডেল, ব্র্যান্ড এম্বাসাডর হওয়ার ক্ষেত্রে আরও সাবধানী হওয়া জরুরি”। এখন এই বিষয়টি সত্যিকার অর্থেই ভাবাচ্ছে।

অন লাইন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ এর সংকটে গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, এমপি। বিতর্কিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড এম্বাসাডর ছিলেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষতি গ্রস্থদের সর্বোচ্চ ক্ষোভের শিকার হোন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে মিছিল করে তাঁর বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়ার হুমকি দিলে অস্বস্তিতে পড়েন মাশরাফি ও ক্রীড়াঙ্গন।

ক্রীড়া সংস্কৃতি যে ক্ষেত্রেরই হোন না কেন একজন তারকাকে মেধা মনন সৃজন আর কঠিন অধ্যবসায়ের মাধ্যমে গড়ে উঠতে হয়। তাঁর এই বেড়ে ওঠার সাথে যুক্ত হয় অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী অনুসারী। সেই সকল ভক্তকুল পছন্দের তারকার প্রতি আস্থা রাখেন,অগাধ বিশ্বাস করেন।

বাজার অর্থনীতিতে তারকার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ব্যবসায়ীগন পণ্য বাজার দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন তারকাদের ইমেজ। সুতরাং তারকাদেরই দায়িত্ব নিজের প্রতি সুবিচার করা।

পণ্যের গুণগত মান নিয়ে বিতর্কে বিভিন্ন সময়ে অনেক মহাতারকাও নাকানি চুবানি খেয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন।

২০১৬ সালে একটি নুডলস কোম্পানির বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে অমিতাভ বচ্চন, প্রীতি জিনতা ও মাধুরী দীক্ষিত ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। তখন ঐ নুডলসে ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া যাওয়ায় সারা ভারত জুড়ে হৈই চৈই পড়ে গিয়েছিল। তখন ভারতীয় সরকার মানহীন পণ্যের মডেলদের ব্যক্তিগত দায় ও শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রনয়নের প্রস্তাব করে। একই সময়ে চীনে আইন ছিল। কোন তারকা কোনো পণ্যের মডেল হতে হলে তাকে ব্যক্তিগত ভাবে সে পণ্য ব্যবহার করে তার গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। ভারতে প্রস্তাবিত ভোক্তা সুরক্ষা আইনটি ২০১৯ সালে শাস্তি ও জরিমানার বিধান রেখে পাশ করা হয়।

বাংলাদেশে আইনটি ২০০৯ সালের। ভোক্তাস্বার্থ সুরক্ষা আইন ২০০৯ এর ৪৪ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতাদের প্রতারণার সাজা একবছরের জেল কিংবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। তবে ভারত ও বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনে মডেলদের কোন প্রকার শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। এই সুযোগে তারকাদের ব্যবহার করা হয় পণ্যের প্রসারে। এর ফলে তারকারা মারাত্মক ইমেজ সংকটে পড়তে পারেন সে বিবেচনা করা হয় না।

এই সমস্যা শুধু যে ব্যক্তিগত পযার্য়ের তা না। জাতীয় প্রতিষ্ঠানও এধরণের সমস্যার জন্ম দিয়ে থাকে। যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড ২০১২ সালে বিপিএল এর টাইটেল স্পনসর হিসেবে নিয়েছে কথিত পনজ স্কিম বা প্রতারণা মুলক প্রতিষ্ঠান ডেসটিনিকে। জাতীয় দলের সাথে ছিল আরেক বিতর্কিত অনলাইন কোম্পানি ইভ্যালী।

জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে নাম থাকলে সাধারণ ভোক্তারা সহজেই বিভ্রান্ত হন। সে দায় তাদের নেয়া উচিত। যাদের সম্পৃক্ততায় মানুষ প্রতারিত হলো সে ধরনের প্রতিষ্ঠান দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষতি গ্রস্হদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোন ঘটনা আমার জানা নেই। সহজেই পার পেয়ে আসছে বলে এমনটা করে। ব্যতিক্রম হলো হাইকোর্টের নির্দেশে ভুইফোড় আবাসন ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বন্ধ হওয়া।

এখানে তারকাদের নিজের সুনামের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব শীল হতে হবে। প্রাসঙ্গিক ভাবে উল্লেখ্য যে,বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠিত আবাসন কোম্পানি মহাতারকা সৌরভ গাঙ্গুলিকে তাদের নতুন প্রকল্পের মডেল হতে প্রস্তাব দেওয়ায় তিনি নিজে এসে প্রকল্পের বাস্তব অবস্থা দেখে সন্তুষ্ট হয়ে কাজটি করে ছিলেন। আমাদের আগামীর বাজারে বিজ্ঞাপনী বাজারে তারকাদের চাহিদা দিন দিন বাড়বেই।

সুতরাং অবশ্যই তাদের আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনার মুহূর্তের অসাধনতায় বহু মানুষের সারাজীবনের স্বাভাবিকতা ধ্বংস হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কঠিন সংকটে পড়তে পারে।

লেখক : মিজানুর রহমান, সভাপতি বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদ

এস/এ