আমাকে বদলে দিয়েছে সাধন

আমাকে বদলে দিয়েছে সাধন

—অনিল সেন

পঁচিশটা বছর কেটে গেলো সাধন
তোকে ভুলতেই পারছি না।
শুনশান নীরবতায় এখনো তোর বাঁচার
আকুতি শুনি।
ক’টা টাকা জোগাড়ের মিনতি এখনো
আমাকে অশ্রুসিক্ত করে।
রাজধানীর একটি হাসপাতালে
তোর স্নিগ্ধ হাসিটা এখনো আমাকে আচ্ছন্ন করে।
আমার খুব মনে আছে সাধন
তুই বলেছিলি; আমি কি বাঁচবো কাকাবাবু
আমি ঈশ্বরের দিব্যি দিয়ে বলেছিলাম
হ্যা, তুই বাঁচবি
ঈশ্বর আমার কথা রাখেনি, সাধন।
নিশ্চয়ই তোর মনে আছে;
বাঁচার আশা নিয়েই আমরা সেইদিন
ডেরায় ফিরেছিলাম ; সন্ধ্যা বেলা,
আমার সাথে গান ধরলি
হু হু করে কেঁদে উঠলি
প্রার্থনায় বসলি,
আমি বললাম; ও সবে আমার আস্তা নেই
তুই কর।
কি আনন্দ কি আনন্দ তোর!!
বাড়ি থেকে খবর পেলাম, তোর অবস্থা ভালো নয়
বুকটা মুচড়ে উঠলো
জানালার ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলাম
বৃষ্টি ভেজা; সন্ধ্যাবেলা
তোর সেই আনন্দটা দেখতে পায়নি।
অসহ্য ব্যথার কুঁকড়ানো শরীরটাকে
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে সবাই।
তোর গগনবিদারী কান্না
কয়েক”শো মাইল হেঁটে আমার হৃদয়ে আঘাত হানে
নিদ্রাহীন সময় কাটে আমার।
কষ্ট লাগে; ভীষণ কষ্ট, জানিস সাধন;
এতো লম্বা জ্ঞাতিজন তোর
অহংকারে অনেকেরই মাটিতে পা পড়ে না
সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে
তোর মৃত্যুটা দেখলো !
পঁচিশটা বছর পরেও
শিশুর মতো আকাশে তাকাই
এখনো তোর সাথে কথা কই
তুই শুনিস কিনা জানিনা।
তোকে শেষ কথা বলতে পারিনি সাধন
তোর মৃত্যু আমাকে বেদম পাল্টে দিয়েছে
আমি দেখেছি এই সমাজের কুৎসিত চেহারা
তোর মৃত্যুতে দেখেছি স্বজনের স্বার্থপরতা।
সবার ভাগ্যে হয় না সাধন
জীবন দিয়ে সত্য প্রকাশ করা
তুই তা করে দেখিয়েছিস।
সবাইকে যেতে হবে তোর পথেই
কিন্তু ক’জন দাগ কাটতে পারে ; বল
চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলি
এই পরিবার, এই সমাজ কতোটা স্বার্থপর
কতোটা অমানবিক।
মোহগ্রস্ত সমাজে তোর অকালমৃত্যু,
একটা জরুরী বার্তা দিয়ে গেছে
আমাকেও বদলে দিয়েছে সাধন।।
এস/এ