দেশকে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত করতে চায় সরকার: প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি: শেখ হাসিনা আরো বলেন, সরকার দেশের ভৌগলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে কক্সবাজার হবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সি-বিচ ও পর্যটন কেন্দ্র এবং অত্যন্ত আধুনিক শহর। যাতে আর্থিকভাবেও দেশ অনেক বেশি লাভবান হবে। অনেক চিন্তা ও পরিকল্পনা রয়েছে। কক্সবাজার নিয়ে তো আরো বেশি। এই বিমানবন্দর সম্প্রসারণ হলে, পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে বা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যত প্লেন যাবে, তাদের রিফুয়েলিংয়ের জন্য সব থেকে সুবিধাজনক জায়গা হবে কক্সবাজার। কারণ একেক সময় পৃথিবীর একেকটি জায়গা উঠে আসে। একসময় হংকং তারপর সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক এখন দুবাই। কিন্তু আমি বলতে পারি ভবিষ্যতে কক্সবাজারই হবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। খুব স্বল্প সময়ে এখানে বিমান এসে নামতে এবং রিফুয়েলিং করে চলে যেতে পারবে।
রোববার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সমুদ্রে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রানওয়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে যে ওয়াদা জনগণের কাছে দিয়েছিলাম, সেটা আরো একটা ধাপ আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সমুদ্র তীরবর্তী জমি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করে নতুন ১০ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে হবে। এতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৪ এর মতো বড় আকারের বিমানগুলো বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে। এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার পথ সুগম হবে। প্রকল্পটি শেষ হলে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা সরাসরিই কক্সবাজারে আসতে পারবেন।
তিনি বলেন, দেশে প্রথমবারের মত আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে এই যে জলভাগের ওপর একটা রানওয়ে নির্মাণ করছি। সেটিও দৃষ্টিনন্দন হবে। অনেকে এটাই দেখতে যাবে। জলভাগের ওপর রানওয়ে নির্মাণের সাহস নিয়ে কাজ শুরু করতে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে সব আন্তর্জাতিক রুটে বিমান যাচ্ছে, তার পাশপাশি আরো কয়েকটি রুট চালুর প্রচেষ্টা চলছে। নিউইয়র্ক, টরেন্টো, সিডনির মতো দূরত্বে চলার মতো আমাদের ড্রিমলাইনার ও অন্যান্য বিমান আছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ হলে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে। আমরা শুধু পশ্চিমাদের দিকে মুখ করে থাকবো না। পাশাপাশি, আমরা অন্যান্য যে সব বন্ধুপ্রতীম দেশ আছে সেখানে আমাদের বিমান যাতে যায় ভবিষ্যতে সেই চেষ্টা করবো।
সরকার দেশের প্রত্যেকটা বিমানবন্দরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে ।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরটাকেও সরকার উন্নত করতে চাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে যেন উন্নত হয় যাতে ভুটান, নেপাল বা ভারতের কয়েকটা রাজ্য এই বিমাবন্দরটা ব্যবহার করতে পারে। সেভাবে এটাকে একটা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নত করতে চাই। আর সিলেট সেটা ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেখানেও মেঘালয়, আসাম বা ভারতের অনেক রাজ্য থেকেও তারা এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরটাও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেখানেও ত্রিপুরা থেকে শুরু করে ভারতের অনেক প্রদেশ এটা ব্যবহার করতে পারে। সেভাবে একটা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা তৈরি করা এবং সেভাবে উন্নত করা সেই চিন্তা মাথায় রয়েছে।
বিমানের কর্মকর্তাদের কর্তব্যনিষ্ঠর সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সততার সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে এটা (বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স) পরিচালনা করবেন। সিভিল এভিয়েশন নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সবকিছু যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় সেটা আপনারা দেখবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত সাড়ে বারো বছরে বোয়িং কোম্পানির ড্রিমলাইনারসহ মোট ১৬টি অত্যাধুনিক বিমান যুক্ত করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৪টি বোয়িং-৭৭৭, ২টি বোয়িং-৭৩৭ ও ৪টি বোয়িং-৭৮৭-৮, ২টি বোয়িং-৭৮৭-৯ ও ৪টি ড্যাশ-৮।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতি স্মরণ করে বলেন, আমরা ‘রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল বিমানবন্দরকেও উন্নত করব। ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ, নতুন রাডার স্থাপন ও জেট ফুয়েল সরবরাহ করার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করব। কক্সবাজারকে সুপিরিয়র বিমান অবতরণে সক্ষম দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ কাজ তাঁর সরকার সম্পন্ন করতে পারবে।
বিমানের এক সময়ের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আকাশ পথে যেতে যেতে পানি পড়তো। এন্টারটেইনমেন্টের কোন ব্যবস্থা ছিল না, ঝড়ঝড়ে ছিল প্লেনগুলো। এই মান্ধাত্বার আমলের বিমান চালাতে পারায় পাইলটদের বলতাম, স্পেশাল পুরষ্কার দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, প্রবাসে ১ কোটির কাছাকাছি মানুষ থাকে। তারা কিন্তু নিজস্ব প্লেন পেলেই সেটাতে চড়তে চায়। তাতে যত কষ্টই হোক। কিন্তু যেই অবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে হতো। বিমানে চড়ার সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার আছে। কিন্তু তারপরও মনে হতো নিজের দেশের জাহাজে যাচ্ছি। এটাই সব থেকে বড় কথা ছিল।
কক্সবাজার প্রান্তে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান এবং সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি)’র চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এভিয়েশন অগ্রগতি সম্পর্কিত কর্মকান্ড নিয়ে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।
এস/এ