জিয়াউর রহমান হত্যা-ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির প্রবর্তক: পানি সম্পদ উপমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক: এনামুল হক শামীম আরো বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর হত্যার ধারাবাহিকতা শুরু করেন জিয়াউর রহমান। তার হাতে খুন হয়ে যায় বাংলার মানুষের ভোটের অধিকার। দেশ থেকে হারিয়ে যায় গণতন্ত্র। জিয়াউর রহমান শুধু বাংলাদেশের গণতন্ত্রকেই খুন করেননি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন তিনি।
শনিবার নড়িয়া সরকারি কলেজ ও সখিপুর থানা ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধু’র ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া এবং স্মরণসভায় অনলাইনে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের তৎকালীন রাজনীতি ও সেনাবাহিনীতে নানা অঘটন এবং চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন জিয়াউর রহমান।
এনামুল হক শামীম বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন জিয়াউর রহমানের শাসনকালে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং কূটনীতিতে পাকিস্তানি ধারা চালু হয়। জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালে এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যেগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসকে কালিমালিপ্ত করেছে। এরকমই একটি দিন ৩ জুন ১৯৭৮ সাল। গণতন্ত্রের হন্তারক ও স্বৈরাচারী ব্যবস্থার জনক জিয়া ওইদিন সেনাপ্রধানের পদে থেকে নাটকীয় এক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন।
তিনি বলেন, জিয়ার পেশাগত জীবনে ঘটেছে নানান উলম্ফন। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান মূলত ছিলেন একজন মেজর। ১৯৭৫ সালের মধ্যেই তিনি মেজর জেনারেল এবং উপ-সেনাপ্রধানের পদ পেলেন। কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মদদ দিলেন। দখল করলেন সেনাপ্রধানের পদ। এরপর প্রহসনের বিচারে হত্যা করলেন শত শত মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যকে। মার্শাল ল অর্ডিন্যান্স জারি করে দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। বন্দি করেন রাজনীতিবিদদের। একপর্যায়ে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা বিচারপতি সায়েমকে অস্ত্রের মুখে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। নষ্ট করে দেন নির্বাচনি ব্যবস্থা। তার হাতে খুন হয়ে যায় বাংলার মানুষের ভোটের অধিকার। দেশ থেকে হারিয়ে যায় গণতন্ত্র। জিয়াউর রহমান শুধু বাংলাদেশের গণতন্ত্রকেই খুন করেননি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, জিয়াউর রহমানের হস্তক্ষেপে লিবিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি আশ্রয় পায় জাতির পিতার খুনিদের একটা বড় অংশ। এসময় লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানসহ অন্যান্য খুনিদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের ব্যবস্থা করেন তিনি। এমনকি তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা জনশক্তি রফতানির কোম্পানি খোলে এবং বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় লোক পাঠানোর ব্যবসা করে। এছাড়াও কন্সট্রাকশান কোম্পানির ব্যবসা করে অনেক টাকার মালিক হয় তারা এই সময়ে। এমনকি তাদের সমর্থকদের লিবিয়ায় নিয়ে, অস্ত্র চালনার অত্যাধুনিক ট্রেনিং দিয়ে, দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থাও করে এই খুনি চক্র।
ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি বলেন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ছাত্রদের হাতে অস্ত্র এবং অবৈধ টাকা তুলে দিয়েছিলেন। আর আমি সৌভাগ্যবান ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালিন সময়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমার (ছাত্রদের) হাতে বই এবং কলম তুলে দিয়েছিলেন। তাই ছাত্রলীগের সঠিক ইতিহাস জাতির কাছে তুলে ধরতে হবে। ছাত্রলীগের কর্মীদের মাদক, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও নৈতিকতার প্রশ্নে আপোসহীন থাকতে হবে। ছাত্রলীগের যে ঐতিহ্য ও অবদান রয়েছে, সেটা প্রতিটি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর মনে রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মেনে শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির পতাকাকে সমুন্নত রেখে আগামীদিনের বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।
এতে অংশগ্রহণ করেন, নড়িয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাসানুজ্জামান খোকন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য জহির সিকদার, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নুর এ আলম আশিক, নড়িয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক আসাদুজ্জামান বিপ্লব, কলেজের আহবায়ক ইমরান খালাসী, সখিপুর থানার সভাপতি সোমেল সরদার, সাধারন সম্পাদক ইমরান বেপারী, নড়িয়া উপজেলার যুগ্ম আহবায়ক স্বপন দেওয়ান, রিয়াদ শেখ, রফিকুল ইসলাম আকাশ, শিমুল হাওলাদার, কলেজের যুগ্ম আহবায়ক রফিক মল্লিক, সিহাব বিন নির্জন, সখিপুর থানার সহ-সভাপতি মিনহাজুল ইসলাম রাজু, রাসেল খান, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জাফর আজিজ, নুরুল আমিন, কবিতা সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক জোবাইদা আফরোজ রিয়া প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধুর লেখা বই “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”, “কারাগারের রোজনামচা” ও “আমার দেখা নয়া চীন”সহ গোয়েন্দা রিপোর্টের সব বই পড়তে তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম।
এস/এ